
প্রকাশিত: Sun, Jun 30, 2024 2:54 PM আপডেট: Tue, Apr 29, 2025 11:31 PM
কিছু করার দক্ষতার চেয়ে চিন্তা করতে পারা কিংবা চিন্তক মানুষের মূল্য অনেক বেশি
ড. কামরুল হাসান মামুন : একটি দেশের শিক্ষামন্ত্রী যদি শিক্ষা সম্মন্ধে ন্যূনতম জ্ঞান না থাকে, সেই দেশ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে নাতো কোন দেশ হবে? দেশের শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন তাদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে, সেই জ্ঞান যেন তারা জীবনের নানা বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে চিন্তা করতে পারে এবং তাদের যেন ন্যূনতম দক্ষতা থাকে সেই লক্ষ্যে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে রূপান্তরের কাজ চলছে।’ তিনি আরো বলেছেন যে, ‘আমাদের অভিভাবকরা ধান কাটার সময়টাতে, তাদের সহযোগিতা করার সময় যা করতে হয়, সেটা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার মধ্যে থাকলে তারা খুশি হয়। কারণ তার প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে তা সম্পৃক্ত।’
আমাদের শিক্ষামন্ত্রী কি জানেন না একটি দেশের শিক্ষার নানা ধারা থাকে? শিক্ষার মূল ধারা, কারিগরি ধারা, ভোকেশনাল ধারা ইত্যাদি। একটি দেশের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের উচিত কারিগরি ধারায় লেখাপড়া করার। মূলধারায় সবার পড়ার দরকার নেই। মূলধারায় যারা পড়বে তারা বিজ্ঞানী, দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হওয়ার লক্ষে পড়বে। এই ধারা খুবই চ্যালেঞ্জিং এজন্যই জার্মানিতে এই ধারাকে ‘জিমনাসিয়াম’ বলে। এই ধারায় পড়তে পড়তে হলে সবাইকে ফিল্টারিং প্রসেসের মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে আসতে হবে। যারা মূল ধারায় টিকতে পারবে না তারা খারাপ নয়। তারা অদরকারি নয়। এই ধারায় পড়েও জীবনে আর্থিকভাবে মূল ধারার সমান এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বেশি আয় করতে পারে এবং এরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। কিন্তু মূল ধারার শিক্ষার উদ্দেশ্য ‘দক্ষতা’ হতে পারে না।
আমাদের বর্তমান মন্ত্রী এবং এর আগের মন্ত্রীকে দেখছি, দক্ষতা দক্ষতা বলে বলে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের নীলক্ষেতে কিংবা এলিফ্যান্ট রোডে অনেক মোবাইল অপারেটর এবং মেকানিক, কম্পিউটার অপারেটর এবং মেকানিক আছে। তারা তাদের কাজে মারাত্মক দক্ষ। কিন্তু তারা প্রযুক্তিবিদ না, তারা ইঞ্জিনিয়ার না। তারা কম্পিউটার বা মোবাইল সম্মন্ধে হয়তো তেমন কিছুই জানে না। বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদ যারা হবে তাদের শিক্ষার মূল ধারা অতিক্রম করে হতে হবে। পৃথিবীর কোন কারিগরি স্কুলে পড়ে কেউ এসব হতে পারে না। বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদরা যা বানায়, কারিগররা তাহা মেরামত করে।
আমাদের বর্তমান সরকার এই শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে মূলধারাকে কারিগরি ধারায় নিয়ে যাচ্ছে। তার একটি প্রমাণ এখানে দিচ্ছি। নতুন শিক্ষাক্রমে ছাত্ররা নবম শ্রেণিতে উঠে যেকোনো একটি পেশা বাছাই করে নিতে হবে। ও সবধহ, ধৎব ুড়ঁ লড়শরহম? এইটা কি কারিগরি শিক্ষাক্রম নাকি যে নবম শ্রেণির ছাত্ররাই পেশা নিয়ে ভাববে? হ্যাঁ, ঠিক তাই। এই কথাটিইতো বলে আসছিলাম যে আমাদের শিক্ষার মূলধারাকে কারিগরি লেভেলে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাহলে আলাদা কারিগরি ধারা রাখবেন কেন? বিলুপ্ত করে দিন। নতুন কারিকুলামে নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাক্রমের আওতায় নবম শ্রেণিতে অকুপেশনাল স্কিল কোর্স এর অধীন আপাতত ৬টি সেক্টর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেক্টরগুলো হলো: ১. আইসিটি, ২. কৃষি ও খাদ্য, ৩. ক্রিয়েটিভ ও মিডিয়া, ৪. পর্যটন ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ৫. নির্মাণ ও প্রকৌশল, ৬. রেডিমেড গার্মেন্টস।
জেনে-বুঝে কোনো বাবা-মা কি বাংলা মাধ্যমে আর পড়াবে? অর্থাৎ সরকারের আসল উদ্দেশ্য বের হয়ে এসেছে। সরকার চায় আমাদের মূল ধারার ছেলেমেয়েরা স্কিলড হোক যেন কিছু করে খেতে পারে। অথচ সারা পৃথিবীতে এর জন্য আলাদা একটি মাধ্যম আছে যাকে আমরা কারিগরি মাধ্যম বলি। উচিত ছিল সেই ধারাকে অত্যন্ত শক্তিশালী করা। মূলধারার শিক্ষা হতে হবে চ্যালেঞ্জিং। এটি সবার জন্য নয়। জাপান, জার্মানি, ফিনল্যান্ডসহ পৃথিবীর সকল দেশের শিক্ষাকে এমন ভাবে সাজায় যেন মূল ধারার শিক্ষার্থীরা শিক্ষার চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম। যারা পারবে না তারা কারিগরি ধারায় যাবে।
আমি নিশ্চিত এইটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আইএমএফ সহ পৃথিবীতে যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের প্রেসক্রিপশনে করা হচ্ছে। তারা চায় আমাদের দেশের মানুষেরা তাদের তৈরি প্রযুক্তির ভোক্তা হই। আমরা যে কখনো বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদ ইত্যাদি না হই। গত পরশুই দেখলাম গত ১০ মাসে বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হিসাবে নিয়ে গেছে। এইটাতো শুধু আইন মেনে নেওয়ার হিসাব। যেই ডলার হুন্ডির মাধ্যমে বা বেআইনিভাবে তার হিসাবতো জানি না। আর নতুন শিক্ষাক্রম যখন ১০ বছর চলবে তারপর আমাদের বিদেশ থেকে বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদ আনতে হবে। বুঝতে পারছেন? কিছু করার দক্ষতার চেয়ে চিন্তা করতে পারা, চিন্তক মানুষের মূল্য অনেক বেশি। আমাদের দেশে এখন চিন্তক নাই বলেই এ ধরনের মানুষেরা এখন শিক্ষামন্ত্রী হন। লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
